স্ট্রবেরি চাষে ব্যাম্পার ফলন
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
সর্বপ্রথম সাইপ্রাসের আইয়ানাপা নামক জায়গায় স্ট্রবেরিব চাষ দেখেন শিশির। সুস্বাদু আর মিষ্টি গন্ধযুক্ত ফল অনেকের মত তাঁকেও আকর্ষণ করে। খুবই দামি হওয়ায় বাংলাদেশী ছাত্র শিশিরের পক্ষে এ ফল কিনে খাওয়ার সামর্থ তখন হয়নি। পরবর্তীতে কয়েকদিনের মধ্যেই স্ট্রবেরি চাষী মিঃ আন্দ্রেআজের সাথে গড়ে ওঠে বন্ধুর সম্পর্ক। প্রতি রবিবারের (সাপ্তাহিক ছুটি) পার্ট টাইম কর্মী হিসাবে আন্দ্রেআজের স্ট্রবেরি বাগানে কাজ করেন শিশির। দিনে ফল তোলা বাবদ ১২ পাউণ্ড আর ইচ্ছে মত স্ট্রবেরি খেয়েই সেবারের মত তৃপ্তি নিয়েই সাইগ্রাস থেকে দেশে ফিরেন শিশির।
দেশে ফিরে চাকুরীর আশা না করে শিশির শিশুদের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলের নাম দেন ‘ দি চাইল্ড প্যারাডাইস একাডেমি।’ ১৩ বছর আগের সেই প্যারাডাইস বর্তমানে নিজের সুনামে-স্বনামে প্রতিষ্ঠিত। স্কুলটিকে শিশির মাল্টিমিডিয়া স্কুল রূপান্তরিত করতে চান।
শিশিরের কাছে যে টাকা আছে তা দিয়ে তিনি কোন রকমে স্কুলটিকে মাল্টিমিডিয়া স্কুলে রূপান্তরিত করতে পারেন।
আর ঠিক সেই সময়ে স্ট্রবেরি চাষের বিষয়টি তার মাথায় আসে। শিশির ভেবে দেখেন যে টাকা বিনিয়োগ করে তিনি মাল্টিমিডিয়া করবেন, সেই পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ তিনি স্ট্রবেরি চাষ করতে পারেন। স্ট্রবেরি চাষের আয় থেকেই পরের বছর তিনি তাঁর ইচ্ছাটি পূরণ করতে পারেন। এ ব্যাপারে তাঁকে উৎসাহ দেন তাঁর স্ত্রী ও ছোট ভাই শিমুল, আজহার ও আশরাফ। তারপরেই তিনি যোগাযোগ করেন বাংলাদেশে বানিজ্যিক স্ট্রবেরি চাষের উদ্যোক্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মন্জুর হোসেনের সাথে।
২০০৯ সালে জয়পুর গ্রামের জনৈক হযরত আলীর কাছ থেকে তার ৫০ শতক জমি তিন বছরের জন্য ৩৬০০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে ‘প্যারাডাইস স্ট্রবেরি চাষ প্রকল্প’ শুরু করেন।
মাত্র ২ মাস পরই সাফল্য উঁকি দিতে থাকে। প্রথম বছরেই শিশির ২,৫০,০০০ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেন। শিশিরের সাফল্যের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় স্ট্রবেরির চারা উৎপাদনের মাধ্যমে। শিশির ফল উৎপাদনের জন্য এ বছর নিজের বাগানের জন্য চারা উৎপাদনের (১০,০০০ চারা, ২০ টাকা দরে ২,০০,০০০ টাকা) পাশাপাশি আরও ৫০,০০০ চারা উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। ইতোমধ্যে শিশির ১৫,০০০ চারা বিক্রির বুকিং ও নিয়েছেন। শিশিরের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তিনি কম করে হলেও এই বছর ৬,০০,০০০ টাকার চারা বিক্রি করতে পারবেন।
নতুন করে ফল উৎপাদনের জন্য আবার নভেম্বরে চারা লাগানো হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই স্ট্রবেরি উঠানো শরু হয়। স্ট্রবেরি বিক্রি করে তিনি কমপক্ষে ৭,০০,০০০ টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদী। ১৫ বছর আগে দেখা স্বপ্নের ফল স্ট্রবেরি এখন নিজের বাগানে চাষ করছেন শিশির এবং সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নই আজকের সফল স্ট্রবেরি চাষী নজরুল ইসলাম শিশির।
শিশির পেশায় একজন শিক্ষক। এজন্য ঈশ্বরগঞ্জ শহরে তিনি শিশির স্যার বলে সমোধিক পরিচিত। স্ট্রবেরি চাষের সুবাদে এলাকায় তিনি এখন ‘স্ট্রবেরি শিশির’ হিসাবেও অনেকের কাছে পরিচিত।
এলাকার আত্মপ্রত্যয়ী যুব-বেকারদের কাছে তিনি এখন মডেল হিসাবে গন্য। তাঁর পরামর্শ অনেক যুব ও বেকারের বেকারত্ব গোছানোয় কাজে লেগেছে।
শিশিরের স্ট্রবেরি বাগান নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জনাব মাহমুদুল হাসান তাঁর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এজন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব নজরুল ইসলাম ও জনাব আকন্দ নিয়মিত তাঁর স্ট্রবেরি বাগান দেখাশুনা করতেন।
এছাড়াও গৌরীপুরে কর্মরত প্রতিবেশী ও বন্ধুস্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবু চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস স্ট্রবেরি শুরু থেকেই শিশিরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন।
চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস জানান, একবিঘা জমিতে ৪-৬ হাজার স্ট্রবেরি চারা লাগানো যায় এবং ৮-১২শ কেজি ফল তোলা যায়। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, বানিজ্যিক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ খুবই লাভজনক। এছাড়া দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর কদর বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাকিব